শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় বাহিনী/সংস্থাগুলো কেন মাইকেল চাকমাকে টার্গেট করেছে?

মাইকেল চাকমা

ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমাকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় বাহিনী/সংস্থাগুলোর টার্গেট করার কারণ কি জানেন? ওই যে হাসিনার আমলে গুম, খুনের চলমান বিচার। কারণ, মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হয়ে ৫ বছর ৪ মাস “আয়নাঘর” নামক কুখ্যাত গোপন বন্দিশালায় আটক ছিলেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে সেই বন্দিশালা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তির পর এ গু/মের ঘটনায় মাইকেল চাকমা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

এই গুম, খুনে কারা জড়িত ইতোমধ্যে তা মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। 

মাইকেল চাকমা গুম-খুনে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি চান এবং দেশ থেকে এই গুমের সংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করতে চান। সে লক্ষ্যে তিনি দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় তার দাবি-দাওয়া তুলে ধরে আসছেন। সেজন্য তারা মাইকেল চাকমার কণ্ঠরোধ করে রাখতে চাচ্ছেন এবং বহু পুরোনো মামলায় চুপিসারে বাদী ও সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে আদালতের মাধ্যমে তাকে ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্বায়ত্তশাসন’ দাবির যৌক্তিকতা

নিরন চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি এক সময় ছিল স্বাধীন রাজ্য। তৎসময়ে এ অঞ্চলের মানুষ তাদের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে জীবন-যাপন করেছে। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা যখন পার্বত্য অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণ দখলে নিতে হয় তখন থেকেই তারা এ অঞ্চলের স্বাধীন মর্যাদাকে আস্তে আস্তে কেড়ে নিতে শুরু করে। তারা নিজেদের প্রশাসন ব্যবস্থা এ অঞ্চলের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। যদিও তারা এ অঞ্চলের মানুষদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং ১৯০০ সালের রেগুলেশনের মাধ্যমে কিছু সুরক্ষার পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। তবে তারা যে অবিচারটি গেছেন সেটি হচ্ছে ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র গঠন করে দেয়ার সময় সম্পূর্ণ পাহাড়ি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া। তাদের এই পদক্ষেপই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের পরবর্তীকালের সকল দুর্দশার মূল কারণ।

ছবিটি পিসিপি’র ৩ যুগ পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত
একটি ফেস্টুন।
পাকিস্তানি শাসকরা এ অঞ্চল দখল নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের প্রণীত পাহাড়িদের সুরক্ষার আইনের ধারাগুলো একে একে রদ করে দেন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এক 
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম তার স্বকীয় সত্তা ফিরে পায়নি। উপরন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি তথা সরকার এ অঞ্চলের জাতিগুলোর স্বতন্ত্র পরিচয় একেবারেই নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস নেয়। পাহাড়ে দ্রুত সামরিক বাহিনী মোতায়েন, সমতল থেকে বাঙালি এনে পুনর্বাসনসহ নানা দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন শুরু করা হয়। ডজনের অধিক গণহত্যা, অসংখ্য হত্যাকাণ্ড, সাম্প্রদায়িক হামলা, অন্যায় দমন-পীড়ন চালিয়ে পাহাড়িদের জাতীয় অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

উন্নয়নের ঘুম পাড়ানি গান শুনে ঘুমিয়ে থাকলেই বিপদ

- নিরন চাকমা

পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের একটি চিত্র
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক ‍"উন্নয়ন" নামক ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে আসছে। অনেকে এ গান শুনে মনের সুখে ঘুমিয়ে পড়েছেন, অনেকে ঝিমুচ্ছেন। তারা এই উন্নয়নের গানে এতই মোহিত হয়ে পড়েছেন যে, তাদেরকে কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটাও বুঝতে পারছেন না। ফলে ক্ষতি যা হবার তা হয়েই যাচ্ছে।

সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

বই, দলীয় পতাকা, পোস্টার-লিফলেট-ব্যানার রাখলে কেন অপরাধ হবে?

- নিরন চাকমা

যে কোন সংগঠন পোস্টার, লিফলেটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালায়, সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখে। আর সেই সংগঠনের সমর্থক, শুভাকাঙ্খী কিংবা সাধারণ জনগণও দলিল হিসেবে সেগুলো সংরক্ষণ করে থাকে।

যারা লেখক তাদেরও সেগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। কারণ তাদেরকে লেখালেখি করতে হয়, ইতিহাস-রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে হয়।

শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫

আগের ফুল বিঝু, এখনকার ফুল বিঝু

- নিরন চাকমা

ভাদজরা ফুল
ভোরে ফুল তোলা, ফুল দিয়ে ঘর সাজানো, গৃহপালিত পশুদের (গরু, ছাগল, মহিষ...) ফুলের মালা পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়া, গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে গাঙ/ছড়ার পাড়ে ফুল দেওয়া/ফুল নিবেদন করে নতুন দিনগুলোর সুখ-শান্তি কামনা করা (আজকাল বুদ্ধমূর্তিতেও ফুল দিয়ে একই প্রার্থনা করা হয়) এরপর গোসল করে পরিশুদ্ধ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসা--এটাই হচ্ছে ফুল বিঝুর মাহাত্ম্য। এছাড়া বাড়িতে বা পাড়ায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে ছড়া থেকে পানি নিয়ে এসে তাদেরকে গোসল করানো হতো। আর অনেকে ফুলবিঝুর দিনেই নানা রকম শাক-সবজি/তরিতরকারি সংগ্রহে বনে-জঙ্গলে যেতেন (এখন তো সবকিছু কিনতে পাওয়া যায়) এবং পরদিন অর্থাৎ মূল/মুর বিঝুতে পরিবেশনের জন্য সেসব সবজির মিশ্রণে পাজন রান্না করা হতো।

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৫

উৎসবের আমেজে যেন সবকিছু ভুলে না যাই

- নিরন চাকমা

গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষত ভুলিয়ে রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এবারে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ উৎসব পালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চাচ্ছে। ইতোমধ্যে যেভাবে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে কিংবা মেলা-অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে সরকার অনেকটা সফল হতে চলেছে।

পাহাড়ে সকল সহিংসতার জন্য কথিত “চাঁদাবাজি’কে দোষারোপ ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন

- নিরন চাকমা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী 
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পাহাড়ে সকল সহিংসতার জন্য কথিত “চাঁদাবাজি’কে দোষারোপ করেছেন। এটা তার ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিরই সুস্পষ্ট প্রতিফলন। অতীতের ফ্যাসিস্টরাও একই সুরে কথা বলেছিলেন এবং পাহাাড়ে পাহাড়ি জনগণের ওপর অন্যায় দমন-পীড়ন চালিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে বার বার সামরিকতন্ত্রের কবলে পড়বে দেশ

- নিরন চাকমা

সংগৃহিত ছবি
পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ কখনো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারবে না। দেশটা বার বার সামরিকতন্ত্রের কবলে পড়বে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে সামরিক ক্ষমতা চর্চার সুতিকাগার। একজন সাধারণ সৈনিকও সেখানে ক্ষমতার দাপট দেখায়।

সুতরাং, বাংলাদেশকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইলে আগে পার্বত্য চট্টগ্রামকে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে।

সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক ক্ষমতা কেন্দ্রিক শাসন জারি রাখেন তাহলে দেশটা বার বার স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় (প্রেত্যক্ষ বা পরোক্ষ) পতিত হবে।

সংবিধান, আইন, বিচার বিভাগ যাই বলেন না কেন, সামরিকতন্ত্র তা মেনে চলে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে এটা পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। সেখানে সংবিধান-আইনের কোন গুরুত্বই নেই। পাহাড়িদের ওপর যা ইচ্ছে তাই করা হয়ে থাকে।

কাজেই, দেশের শাসকগোষ্ঠিভুক্ত সকল দলসহ ব্যক্তি-বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, নাগরিক ও তরুণ প্রজন্মকে এ নিয়ে ভাবা দরকার।

২১.০১.২০২৫

সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫

পাহাড় ও সমতলের জাতিসত্তাদের সাথে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন?

-নিরন চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের বাঙালি ভিন্ন অপরাপর জাতিসত্তার জনগণ যখন সংবিধানে জাতিগত পরিচয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছেন তখনই দেয়া হচ্ছে “বিচ্ছিন্নতাবাদী”র মতো ট্যাগ। তাহলে প্রশ্ন হলো- কারা এদেশের বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়? কেনই বা তারা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে দেশের অপরাপর জাতিসত্তাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে?

আমরা জানি, আওয়ামী লীগ ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির জাতিসত্তাগুলোকে সাংবিধানিকভাবে বাঙালি বানিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হলেও তা বাতিল করা হয়নি। তার আগে ৭২’র সংবিধানেও সবাইকে বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এম এন লারমা।