মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১১

পার্বত্য চট্টগ্রামে কারা ঐক্য চায় না

সম্প্রতি জেএসএস-এর সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমাসহ ৪ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অনেকে দুই পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আবার অনেকে উভয় পার্টি সম্পর্কে নানান কথাবার্তাও বলছেন। কিন্তু এত বছরেও কেন এই সংঘাত জিইয়ে আছে বা কারা এই সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চায় তা ভালোভাবে খটিয়ে দেখার সময় এসেছে। 
 
অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ২০০০ সাল থেকে ইউপিডিএফ জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইউপিডিএফ বিভিন্নভাবে চেয়েছিল ন্যুনতম কর্মসুচির ভিত্তিতে হলেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জেএসএসকে রাজী করাতে। এ বিষয়ে রাজা দেবাশীষ রায় সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বয়জ্যেষ্ঠ মুরুব্বীরাও প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু জেএসএস(সন্তু লারমা) এ বিষয়ে কোন সাড়া না দিয়ে ইউপিডিএফকে ধ্বংস করে দেয়ার কাজে মনোযোগী হয়ে পড়ে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের রূপ নেয়। যা আজ পর্যন্ত চলছে।

তবে  রূপায়ন দেওয়ানের নেতৃত্বাধীন জেএসএস (এমএন লারমা)-এর সাথে ইউপিডিএফ-এর কোন সংঘাত এখন আর নেই।

জেএসএস-এর সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিষয়ে ইউপিডিএফ-এর অবস্থান সম্পর্কে সকলের জানার সুবিধার্থে আমি ইউপিডিএফ-এর মুখপত্র স্বাধিকার বুলেটিনে প্রকাশিত এ বিষয়ক কিছু লেখার চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরছি :

১। স্বাধিকার বুলেটিন নং-৩, প্রকাশকাল : ১৮ জুন ২০০০। এ সংখ্যায় ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয় ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি নয়, আসুন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি।
২। স্বাধিকার বুলেটিন নং-১৭, প্রকাশকাল : ১ জানুয়ারী ২০০১। এ সংখ্যায় ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়- জনসংহতি সমিতির প্রতি ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর তিন দফা প্রস্তাব : ১. অচিরেই ইউপিডিএফ এবং জনগণের ওপর আক্রমণ বন্ধ করা, ২. সরকারের বিরুদ্ধে ন্যুনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা, ৩. ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্যে ইউপিডিএফ ও জেএসএস-সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল দেশপ্রেমিক শক্তিসমূহের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গড়ে তোলা।
৩। স্বাধিকার বুলেটিন নং-২০, প্রকাশ কাল : ১০ এপ্রিল ২০০২। এ সংখ্যায় হেডিং আকারে জেএসএস-এর উদ্দেশ্যে লেখা  হয়- বৈসাবিতে আহ্বান : সংঘাত হানাহানি নয়, আসুন ঐক্যবদ্ধ হই।

এছাড়াও বিগত ২০১০ সালে জেএসএস-এর ৯ম জাতীয় সম্মেলনের সময় আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ইউপিডিএফ বিবৃতি দিয়ে তার অবস্থান জানিয়ে দেয়।এতে বলা হয় “চুক্তি বাস্তবায়নে অনীহ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জেএসএস আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করলে ইউপিডিএফ তাতে পূর্ণ সমর্থন দেবে।” http://chtnewsbangla.blogspot.com/2011/02/blog-post_5049.html
তারপরও কি বলা হবে ইউপিডিএফ ঐক্য চায়নি বা ঐক্য চায় না?

অচিরেই এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ইউপিডিএফ-এর বিভিন্ন সময়ে দেয়া প্রস্তাবের প্রতি সম্মান জানিয়ে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে জেএসএস (সন্তু লারমা)-এর এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমগ্র জুম্ম জনগণের স্বার্থে সন্তু লারমা কি এটা করবেন?