বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে গর্জে উঠুন

আগামী ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের এক বছর পূর্ণ হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যুব সমাজের অগ্রগামী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম এ দিনকে কালো দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা করেছে।

আপনারা নিশ্চয় জানেন, গত বছর ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করেছে। উক্ত সংশোধনী মোতাবেক, “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।”(৬নং অনুচ্ছদ) অর্থা এদেশে বাঙালি ছাড়া আর কোন জাতির অস্তিত্ব নেই বলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে দেশে সুদীর্ঘ কাল থেকে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে বাঙালি জাতীয়তার মধ্যে বিলীন করে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতির জনগণকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে বাধ্য করার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও সরকার তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছে না। কিন্তু আগামীতে যদি আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসে তাহলে নিশ্চয় এটি কার্যকর করার চেষ্টা করবে। যেমনি শেখ মুজিবুর রহমানের পাহাড়ি জনগণকে বাঙালি বানানোর স্বপ্ন তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন।

এছাড়াও সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যন্য ধর্মাবলম্বীদের স্থায়ীভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। তাছাড়া ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার এবং সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকগণের সংগঠন করার স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে অতীতেও বাঙালি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশকে একক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাহাড়ি জনগণকে বাঙালি হয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সংবিধানে তাদেরকে বাঙালি বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু সেদিনও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ শেখ মুজিব ও উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মেনে নেয়নি। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সে সময় সংসদে দাঁড়িয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, “একজন চাকমা কখনো বাঙালি হতে পারে না, অনুরূপ একজন বাঙালিও কখনো চাকমা হতে পারে না।”

শেখ মুজিব কর্তৃক দেশে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ওপর এভাবে গায়ের জোরে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তকে পরবর্তীকালে এক ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে সেই ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করলেন। এতদিন তিনি ঈশপের গল্পের ভেড়ার ছাল পরা নেকড়ের মতো সংখ্যালঘু জাতির জনগণের দরদী ও ত্রাণকর্তা সেজে অভিনয় করেছিলেন। তার সেই মেকী দরদী কথাবার্তায় অনেকে বিশ্বাস স্থাপনও করেছিলেন এবং এখনো বিশ্বাস করে চলেছেন। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের মুখোশ খুলে পড়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে তার কুসি, ঘৃণ্য ও ফ্যসিস্ট চেহারা দেখতে পাচ্ছি। কাজেই শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ থেকে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কাছ থেকেও আমাদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।

ক্ষমতার জোরে, বল প্রয়োগ করে অনেক কিছু করা যায়; কিন্তু এক জাতিকে অন্য একটি ভিন্ন জাতিতে রূপান্তরিত করা যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘকাল থেকে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খুমী, লুসাই, পাংখো, সাঁওতাল ও গুর্খা-অহোমী জাতির জনগণকে কখনই বাঙালি বানানো যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের বাঙালি বানানোর এই ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে রুখতেই হবে। আমাদের আর চুপ করে বসে থাকলে চলবে না, গর্জে উঠতে হবে। তাই আসুন, আগামী ৩০ জুনকে কালো দিবস হিসেবে পালন করি এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি।