মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১১

সুষ্ঠু বিতর্কই একমাত্র কাম্য

অডঙ চাকমার "জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর ফেসবুক নাটিকা এবং কিছু ভাষ্য বিশ্লেষণ" লেখাটি পড়লাম৷ লেখাটার জন্য তাকে ধন্যবাদ৷ আসলে আমি নিজে অত্যন্ত লজ্জিত৷ আমাদের মধ্যে সুষ্ঠু বির্তক হওয়া উচিত৷ বিতর্কের নামে গালিগালাজ কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়, সে যেই করুক বা যে দলেরই হোক না কেন৷

আমি বলতে পারি, আমরা ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে চুক্তির আগে থেকেই জেএসএস-এর সাথে একটা রাজনৈতিক আদর্শিক বিতর্ক চালাতে চেয়েছিলাম৷ এ জন্য জেএসএস নেতাদের সাথে মুখোমুখি বসে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ জেএসএস নেতারা বলেছিলেন তারা পরে যোগাযোগ করে উত্তর দেবেন কিন্তু তারা তাদের সে কথা রাখেননি৷ এরপর চুক্তির আগে ও পরে আমাদের পক্ষ থেকে লেখালেখির মাধ্যমে জেএসএস-কে বিতর্কে টেনে আনার চালানো হয়৷ স্বাধিকারে এ সময় খোঁচা দিয়ে অনেক লেখা ছাপা হয়৷ দীপায়ন খীসাও জেএসএস ও সন্তু লারমাকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে রাজনৈতিক মন্তব্য প্রকাশ করেছিলেন৷ কিন্তু তারপরও জেএসএস নেতারা নীরব ছিলেন৷ কোন উত্তর দেননি৷ তবে সারেন্ডারের দীর্ঘ দিন পর জেএসএস-এর একটি স্মরণিকায় জীবন চাকমা ইউপিডিএফ-কে সমালোচনা করে একটি লেখা লেখেন৷ বিশেষত পূর্ণস্বায়ত্তশাসন শব্দটি রাজনৈতিক অভিধানে নেই বলে তিনি দাবি করেছিলেন৷ ইউপিডিএফ-এর পক্ষে সচিব চাকমা জীবন চাকমার ওই লেখার একটি দীর্ঘ জবাব দিয়েছিলেন, যা স্বাধিকারে প্রকাশিত হয়েছিল৷ আমরা আশা করেছিলাম, জীবন বাবুরা বিতর্ককে এগিয়ে নেবেন, কিন্তু তারা আর কোন জবাব দেননি৷

কিছু দিন আগে ফেইসবুকে জেএসএস-এর একজন বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন৷ তার নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না৷ তাকে বিতর্কে অংশ নিতে দেখে ইউপিডিএফ খুশী হয়েছিল৷ কিন্তু ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে তার লেখার জবাব দেয়া হলে তিনিও বিতর্ক থেকে সরে পড়েন৷ আর কোন জবাব দেননি৷

অনেক সময় আমি লক্ষ্য করেছি, আলোচনা-বিতর্ককে সুকৌশলে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা চালানো হয়৷ যেমন অডং চাকমা যে থ্রেডটি তার লেখার নীচে সাথে সংযুক্ত করেছেন তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বান্দরবানে ইউপিডিএফ-এর ডাকা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ সম্পর্কে ভালো একটা বিতর্ক হতে পারতো৷ কিন্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে কিছু বিষয়ের অবতারণা করে অত্যন্ত সুকৌশলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এরপর যেটা হয়েছে সেটাকে যাই হোক বিতর্ক বলা চলে না৷ তাই উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে কেউ বিতর্ককে ডাইভার্ট করতে চাইলে উচিত হবে সংযত থাকা, পাঁতানো ফাঁদে পা না দেয়া৷

অডং চাকমা ইউপিডিএফ ও জেএসএস উভয় পার্টিকে সমালোচনা করে একটা লেখা লিখেছিলেন কয়েক দিন আগে৷ আমার জানা মতে, একমাত্র ইউপিডিএফ-ই তার ওই লেখার জবাব দিয়ে বিতর্ক চালিয়েছিল৷ জেএসএস-এর পক্ষ থেকে বিতর্কে অংশ নেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই৷ যদি কেউ অংশ নিয়ে থাকে তাহলে তারা যা করেছেন তা হলো, হয় তার আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা, নতুবা গালিগালাজ ও হুমকি দেয়া৷ এর বেশী কিছু নয়৷ তিনি যে পয়েন্টগুলো তুলেছেন তার কোন জবাব দেননি৷ বরং তাকেসহ অন্যান্য ঐক্য-আকাঙ্ক্ষীদের "ঐক্যের ফেরিওয়ালা" বলে কটাক্ষ করা হয়েছে৷

ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলে আমরা তাতে সানন্দে অংশ নেবো, যেমন অতীতে অংশ নিয়েছি৷ আলোচনা সমালোচনা বিতর্ক ছাড়া একটি সমাজ একটি জাতি কখনোই সামনে এগিয়ে যেতে পারে না৷

আজ পত্রিকায় পড়লাম, রাঙামাটিতে নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ দুই পার্টি ইউপিডিএফ ও জেএসএস-কে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন (প্রথম আলো)৷ আমরা তাদের এই ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা ও আহ্বানকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই৷ আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত আছি৷ নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের উচিত হবে কেবলমাত্র আহ্বানের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে জেএসএস নেতাদেরকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজী করানো৷ ইউপিডিএফ ইতিমধ্যে ধারাবাহিকভাবে কিছু কর্মসূচী পালন করছে৷ আগামীকাল তিন জেলায় সড়ক ও নৌপথ অবরোধ৷ জেএসএস-ও একই ধরনের কর্মসূচী দিতে পারে অথবা ইউপিডিএফ-এর কর্মসূচীতে সমর্থন দিতে পারে৷ কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা জেএসএস নেতৃত্বের মধ্যে এখনো পর্যন্ত ঐক্যের ব্যাপারে কোন আগ্রহ লক্ষ্য করছি না৷