সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতের নির্বাচনী ইতিহাস ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করণীয়

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের মধ্যে আ’লীগ-বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায়। দশম জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে এবারও তার কোন ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে না। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে তথাকথিত জাতীয় দলে ভিড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়তে শুরু করেছে। সুবিধা লাভের আশায় অনেকে নিজের জাতীয় অস্তিত্বকে বিকিয়ে দিতেও লজ্জাবোধ করছে না। যা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৫৪ সাল থেকে ’৯১ সালের আগ পর্যন্ত জুম্ম জনগণ আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোন দলকেই গ্রহণ করেনি। প্রতিটি নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীদের পরাজিত করে জুম্মরা নিজস্ব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়যুক্ত করেছে। জুম্ম জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে বরাবরই এসব দল পরাজয় বরণ করেছে। যে দল পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, যে দল জোর জুলুম ও দমন-পীড়ন চালিয়েছে, জুম্ম জনগণ বরাবরই সে দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এ বিজয় কাদের?

এ বিজয় পাহাড়ি জনগণের নয়, 
এ বিজয়তো তুমি কে? আমি কে? বাঙালি-বাঙালি’র

এ বিজয় কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের নয়, 
এ বিজয়তো বুর্জোয়া ধনীক শ্রেণীর

এ বিজয় নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের নয়, 
এ বিজয়তো শাসক শোষকের রক্তচক্ষুর

এ বিজয় সংখ্যালঘু জাতি ও জনগণের নয়, 
এ বিজয়তো সংখ্যাগুরু বৃহ জাতিদম্ভের

এ বিজয় দেশের সাধারণ জনগণের নয়, 
এ বিজয়তো যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তাদের

[যে দেশ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের উপর শোষণ-বঞ্চনা ও নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়,  যে দেশ দলীয় সংর্কণীতার উর্ধ্বে উঠতে পারে না,  যে দেশ পাহাড়ের সংখ্যালঘু জাতির উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, গণহত্যা ও নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় সে দেশে বিজয় দিবস পালনের স্বার্থকতা কোথায়?]

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যাকান্ড

রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসেৌধ।
 আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন পাক হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী দেশের বরণ্য সন্তান হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। ওরা আরো মনে করেছিল যে, এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে এদেশকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের এসব বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বর্বর পাক বাহিনী ও রাজাকাররা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক সহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে এদেশকে মেধাশূণ্য করার অপচেষ্টা চালায়। তাই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এইদিনকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই এই দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
বুদ্ধিজীবী হত্যার একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, একইদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরীহ জুম্মদের উপরও চালানো হয় নির্যাতন ও হত্যাকান্ড। তবে এ নির্যাতন ও হত্যাকান্ড পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হয়নি। এদেশের মুক্তিবাহিনীই খাগড়াছড়ির কুকিছড়া-গাছবান এলাকায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। এদিন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে ৮জন নিরীহ জুম্মকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি

আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ৩০টি ধারা সম্বলিত এই ঘোষণাপত্রের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা অবমাননাকর আচরণ করা কিম্বা কাউকে নির্যাতন করা বা শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করা চলবে না’;  ৯নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘কাউকে খেয়াল খুশীমত গ্রেফতার বা আটক করা অথবা নির্বাসন দেয়া যাবে না;  ১৫ নং ধারায় বলা হয়, ‘প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে। কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না’; ২০ নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হবার অধিকার রয়েছে’।
 
৬৫ বছর আগে এই মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এর কোন বালাই নেই। যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চালানো হচ্ছে নিপীড়ন-নির্যাতনের স্টিম রোলার। চালানো হয়েছে ডজনের অধিক গণহত্যা ও সাম্প্রতিক তাইন্দং হামলা সহ অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা। যত্রতত্র ধর-পাকড়, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাতো বলেই শেষ করা যাবে না। আজও এসব নির্যাতন, হামলা-মামলা, ধরপাকড়ের কোন শেষ নেই। মানবাধিকার দিবসের একদিন আগে গতকাল ৯ ডিসেম্বর থেকে খাগড়াছড়ি জেলায় শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যেীথ বাহিনীর অপারেশন। গতকাল ৯ ডিসেম্বর সোমবার রাতে দিঘীনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি তল্লাশি ও ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। দিঘীনালা ও মহালছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৮ নেতা-কর্মী এবং মাটিরাঙ্গায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। অপারেশন আরো কয়েকদিন পর্যন্ত চালানো হবে এবং ধরপাকড় চলবে এমন আভাষও পাওয়া যাচ্ছে।