আজ ৩০ জুন
সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের ২ বছর। ২০১১ সালের এ দিন আওয়ামী লীগ
সরকার গায়ের জোরে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করে পার্বত্য
চট্টগ্রাম সহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়। উক্ত
সংশোধনীতে ৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং
নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।” অর্থাৎ এদেশে বাঙালি ছাড়া আর কোন জাতির অস্তিত্ব নেই
বলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে ঘোষণা করা হয়।
আজকের এ
দিনটি ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি বিশেষ এবং
উজ্জ্বলতম দিনও। আজ “সান্তাল হুল” দিবস। যা ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নামে অধিক পরিচিত। ১৮৫৫
সালের এদিন সান্তাল
সম্প্রদায়ের চার ভাই সিদ-কানহু-চান্দ ও ভাইরোর নেতৃত্বে সান্তাল জনগোষ্ঠি সহ
স্থানীয় জনতা এক গণসমাবেশ থেকে সর্বাত্বক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য
ছিল বৃটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার,
নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম
সান্তাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।
সান্তালরা
ইংরেজ বাহিনীর বন্দুক ও কামানের বিপরীতে তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে
যুদ্ধ করেছিল। এ যুদ্ধে সিদ-কানহু-চান্দ ও ভাইরো সহ অনেক সান্তাল যোদ্ধা শাহাদত
বরণ করেন। সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা বৃটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
যেদিন
জাতীয় সংসদে এই বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী আইন পাস করা হচ্ছিলো সেদিন
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিন এমপি কোন প্রতিবাদ না করে বিলের
পক্ষে (বাঙালি জাতীয়তার পক্ষে) টেবিল চাপড়িয়ে ভোট প্রদান করে পাহাড়ি জনগণের সাথে
চরমভাবে বেঈমানী করেছেন।
পার্বত্য
চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে অতীতেও বাঙালি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর
ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশকে একক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে
তোলার লক্ষ্যে পাহাড়ি জনগণকে বাঙালি হয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সংবিধানে
তাদেরকে বাঙালি বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু সেদিনও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ শেখ
মুজিব ও উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মেনে
নেয়নি।
ক্ষমতার
জোরে, বলপ্রয়োগ করে অনেক কিছু করা যায়; কিন্তু এক জাতিকে অন্য একটি ভিন্ন জাতিতে
রূপান্তরিত করা যায় না। পার্বত্য
চট্টগ্রামে সুদীর্ঘকাল থেকে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো,
খিয়াং, চাক, খুমী, লুসাই, পাংখো, সাঁওতাল, গুর্খা-অহোমী জাতির জনগণ কখনো নিজেদের
বাঙালি হিসেবে পরিচয় দেবে না। আওয়ামী সরকারের বাঙালি বানানোর এই ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে
রুখতেই হবে।
ইউপিডিএফ
এই বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের পরপরই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। জেলা ও
থানা সদরে বিক্ষোভ সহ তিন পার্বত্য জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ
করেছে। গত বছর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এই
সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু সরকার এখনো এই বিতর্কিত সংশোধনী
প্রত্যাহার না করে সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তা বহাল রেখেছে। তাই এই সংশোধনী
বাতিল করে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে
আমাদের তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে আমাদের সরকারের
এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে।
তাই আসুন
সরকারের চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি:
সংবিধানের
বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল কর, করতে হবে
আমরা
বাঙালি নই, আমাদের নিজস্ব জাতীয়তার স্বীকৃতি দাও, দিতে হবে
পার্বত্য
চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা কর, করতে হবে
পার্বত্য
চট্টগ্রাম থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার কর, করতে হবে
পাহাড়িদের
প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দাও, দিতে হবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন