সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সহযোদ্ধা শুক্ল’র না ফেরার দেশে চলে যাওয়া ও আমার অনুভূতি

দুরারোগ্য ব্ল্যাড ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে সহযোদ্ধা শুক্ল বিকাশ চাকমা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু তারপরও মেনে নেয়া ছাড়া কি-ই বা করার আছে?

শুক্ল চাকমা দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সে দীর্ঘ কয়েক মাস যাব ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিসাধীন থাকার পরও শারিরীক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে খাগড়াছড়িতে নিয়ে আসা হয়। সে প্রাণপন চেষ্টা করেছিলো ক্যান্সরের বিরদ্ধে জয়ী হওয়ার। কিন্তু জয়ী হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলো। গতকাল শনিবার(২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।

মৃত্যুর দু’দিন আগে তাকে দেখতে তার বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন সে ক্যান্সরের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো। সে কথা বলতে ও লোকজনকে চিনতে পারছিলো না। যার কারণে সেদিন তার সাথে আর কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার রোগ যন্ত্রণা উপশমের আশায় সেদিন বাড়িতে ভিক্ষু ডেকে পরিত্রাণ সূত্র শ্রবণ করা হয়েছিল।

আজ রবিবার সকালেও শেষবারের মতো তাকে দেখতে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি তার বাবা অসহায়ভাবে বাড়ির বাইরে এক কোণায় বসে রয়েছে। তাকে সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কোন কিছুই ছিল না।

শুক্ল বিকাশ চাকমা আত্মীয়তার সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। সে আমার চেয়ে বেশ কয়েক বছরের ছোট। আমরা একই এলাকার বলতে গেলে একই গ্রামের লোক।  ইউপিডিএফে যোগ দেয়ার আগে সে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলো। পরে সরাসরি ইউপিডিএফে যোগ দিয়ে একনিষ্টভাবে সংগঠন গড়ার কাজ করেছিলো। সে যখন পার্টিতে যোগ দেয় তখন আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। তার ইউপিডিএফের যোগদানের খবর পেয়ে আমি যে কি পরিমাণ খুশী হয়েছিলাম তা বলার মতো নয়।

শুক্ল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে একজন যোগ্য কর্মী হয়ে গড়ে উঠার অবস্থায় ছিলো। সে বেঁচে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অভাগা জুম্মদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিশ্চয় কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারতো। তার অকাল মৃত্যুতে পার্টি ও জনগণ একজন একনিষ্ট সংগ্র্রামী সহযোদ্ধাকে হারালো। এ ক্ষতি কিছুতেই পূরণ হবার নয়। তবে, সে যে আদর্শে বলীয়ান হয়ে লড়াই-সংগ্রামে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলো সে আদর্শের কোন মৃত্যু নেই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন