শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

'ভালোবাসা দিবস' তরুণদের চিন্তার বিকৃতি ও শাসক শ্রেণীর একটি মোক্ষম হাতিয়ার

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী পালিত হচ্ছে 'ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে'। শহর ছাড়িয়ে গ্রামে-গঞ্জেও এখন তরুণ-তরুণীরা এ দিবসটি পালন করে থাকে। এ দিবসটি নিয়ে কর্পোরেট মিডিয়াগুলো বিশেষ প্রচারণায় সরব হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মও এক্ষেত্রে বসে নেই। সময়ের সাথে সাথে তারাও এই দিবসের নেশায় মশগুল হয়ে পড়ছে। পরিবর্তন হচ্ছে রুচিবোধের। বদলে যাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি। গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে মদ-জুয়া-হিরোইন সহ বিভিন্ন মাদকের আসরে। ঘটছে চিন্তার বিকৃতি।  
এদিকে, এসব সংস্কৃতি ও রুচিবোধের মধ্যে তরুণদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখতে শাসক শ্রেণী এ ধরনের দিবসগুলোকে একটি মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ তরুণদেরকে এসব দিবসে আচ্ছন্ন রাখতে পারলেই তাদের লাভ। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ তরুণ-তরুণীই এটা কিছুতেই বুঝতে চায় না। যা আমাদের সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য কখনো শুভ লক্ষণ নয়।

১৪ ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি বাতিল, বন্দী মুক্তি ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ছাত্রদের সমাবেশে বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা ও গুলি চালায়।  ছাত্ররাও ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এদিন পুলিশের গুলিতে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে প্রাণ দেয় ১০ জন। গ্রেপ্তার হয় ১ হাজার ৩৩১ জন। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি পালিত হয়ে আসছে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে।
স্বৈরাচারি এরশাদের বিরুদ্ধে এটাই ছিল প্রথম ব্যাপকতর প্রতিরোধ। এর আগে এত বড় প্রতিরোধ আর হয়নি। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদের তিনটি মৌলিক দাবিতে শিক্ষানীতি স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্রবন্দিদের মধ্যে তিনজন বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়। সামরিকতন্ত্রের অবসান না হলেও ঘরোয়া রাজনীতির অধিকার দিতে বাধ্য হয় সামরিক জান্তা। আন্দোলনের সামনে সামরিক স্বৈরাচার মাথানত করে।
এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।

কেন ও কি উদ্দেশ্যে এ 'ভালোবাসা' দিবস?
স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের কয়েক বছর না যেতেই ১৪ ফেব্রুয়ারিকে 'ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস' হিসাবে পালনের জন্য এদেশের শাসকশ্রেণীর অন্যতম মুখপত্র যায়যায়দিন প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। এর উদ্দেশ্য হলো তরুণ সমাজের সংগ্রামী চেতনাকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। ভালবাসা দিবসের নামে তারা ‘আমি আর তুমি’র মত চরম স্বার্থপর, সমাজ-বিচ্ছিন্ন চেতনা যুব সমাজের মধ্যে বেশ সফলভাবেই চাপিয়ে দিতে পেরেছে। প্রেম-ভালোবাসার মত স্বাভাবিক সম্পর্ককে অতিপ্রাকৃত বিষয়ে পরিণত করে তরুণদের আফিম নেশার মত বুঁদ করে ফেলেছে। এ ব্যক্তিগত ভালোবাসার একপিঠে কাম, আরেক পিঠে কর্পোরেট কালচারের উস্কানি। আর ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উদযাপনের সংস্কৃতি ঠিক এ জোয়ারকেই জোরদার করছে। শাসকশ্রেণী এ থেকে লাভ তুলে নিচ্ছে দু’ভাবে; সমাজের সবচেয়ে প্রাণবন্ত লড়াকু অংশ যুব সমাজকে মুক্তির লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন ও উদাসীন করে ফেলে এবং দিনটিকে বাণিজ্যের উসবে পরিণত করা। একটি মহল অনেক কায়দা-কৌশল করে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় এ ইতিহাসকে ঢেকে দেওয়ার জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির ভ্যালেন্টাইনস ডে’ কে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নতুন প্রজন্মকে রাজনৈতিক চেতনাহীন করাই এর উদ্দেশ্য।
কাজেই, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এই মাথা পঁচার সংস্কৃতির কবল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  ভালোবাসা দিবসের নামে অপসংস্কৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে না গিয়ে দেশ-সমাজ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে। দেশের সকল ছাত্র-যুব-নারী, শ্রমিক-কৃষকসহ নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে শাসকশ্রেণীর নিপীড়ন-নির্যাতন ও শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ব্যাপক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

[বি:দ্র:- বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্তাকারে লেখাটি লেখা হয়েছে]




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন