-নিরন চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের বাঙালি ভিন্ন অপরাপর জাতিসত্তার জনগণ যখন সংবিধানে জাতিগত পরিচয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছেন তখনই দেয়া হচ্ছে “বিচ্ছিন্নতাবাদী”র মতো ট্যাগ। তাহলে প্রশ্ন হলো- কারা এদেশের বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়? কেনই বা তারা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে দেশের অপরাপর জাতিসত্তাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাচ্ছে?
আমরা জানি, আওয়ামী লীগ ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির জাতিসত্তাগুলোকে সাংবিধানিকভাবে বাঙালি বানিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হলেও তা বাতিল করা হয়নি। তার আগে ৭২’র সংবিধানেও সবাইকে বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এম এন লারমা।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এখনো সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বহাল রেখেছে। কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয় বাতিল করলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিষয়টিতে হাত দেয়নি।
এতেই প্রমাণ হয় বাংলাদেশের সকল সরকারই দেশের বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাগুলোকে উগ্র বাঙালি জাতীয়তার মধ্যে বিলীন করে দিতে চায়। যা চেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের
মূর্তি ভাঙতে দেখেছি, শেখ মুজিবুর রহমান-শেখ হাসিনার গ্রাফিতি-ছবিতে জুতা-ইট পাটকেল
ছুঁড়ে মারার কর্মসূচি পালন করতে দেখছি। কিন্তু তাদের (শেখ মুজিব-শেখ হাসিনা) উগ্র
বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার বিষয়ে তেমন কোন কথা বলতে দেখছি না।
উপরন্তু এখন এই উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণাটা আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর মতো জায়গায়ও এখন জাতিসত্তাগুলোর মানুষেরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
যেখানে ইনক্লুসিভ
বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে পাহাড়িসহ সমতলের
জাতিসত্তাদের সাথে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? কেনই বা তাদরেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার
পাঁয়তারা?
২০.০১.২০২৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন