রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪

পাহাড়কে কারা বিচ্ছিন্ন করতে চায়?

- নিরন চাকমা

পাহাড় বা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পাহাড়িদের কেউ চায় না, কোন আঞ্চলিক দলও চায় না, কোন পাহাড়িও তা চায় না। যদি তা চাইতো তাহলে তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতো না, চুক্তি করতো না। কোন আঞ্চলিক দলের গঠনতন্ত্র কিংবা ঘোষণাপত্রে পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার কোন কিছুই লেখা নেই। তাহলে “পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার” এই জুজুর ভয় কেন?

মূলত পাহাড়কে-পাহাড়িদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে স্বয়ং শাসকগোষ্ঠি ও শাসকগোষ্ঠিভুক্ত বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি, আমলা এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী-সংস্থার কায়েমী স্বার্থবাদী অংশটি (যারা দীর্ঘসময় ধরে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করে আসছে)। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ প্রবণতা আমরা এদেশের শাসকগোষ্ঠির মধ্যে দেখে আসছি। তারাই পাহাড়িদের বিচ্ছিন্ন করে পাহাড়কে লুটেপুটে খেয়ে ধ্বংস করতে চায়।

সকলের এটাও মনে রাখা দরকার যে, পাহাড়িরা কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়, তারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্নও হতে চায় না। তারা চায় ন্যায্য অধিকার, সমমর্যাদা, ভূমি অধিকার, র্নিপীড়ন থেকে মুক্তি ও জাতিগত সাংবিধানিক স্বীকৃতি। এই অধিকার চাওয়াটা কেন বিচ্ছিন্নতা হবে? সংবিধানে জাতিগত স্বীকৃতির দাবি কীভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদ হয়?

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর যখন বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে, তখনই পাহাড়িদের উপর একের পর এক হামলা, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলা হচ্ছে। এর দায় তো সরকারকে-রাষ্ট্রকে এবং পাহাড়ে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রশাসনকে নিতে হবে। কারণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ এই পরিস্থিতি তৈরি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। তারা পাহাড়ে তাদের শাসন-ক্ষমতা, খবরদারি-নজরদারি বজায় রাখতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরা মূলত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের নিয়োজিত ও সুবিধাভোগী। আওয়ামী লীগের দেড় দশকের ক্ষমতার এরা পাহাড়কে ইচ্ছেমত লুটেপুটে খেয়েছে, এখনো খেযে যাচ্ছে। সেই সাথে পাহাড়িদের উপর চালিয়েছে অবর্ণনীয় নিপীড়ন। হত্যা-গুমের মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে।

সুতরাং, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পাহাড়ের পরিস্থিতি বুঝতে হবে এবং স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কথায় কিংবা তাদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না। তা করা হলে পাহাড়ের মানুষ মেনে নেবে না।

তাই, সরকারের উচিত হবে, পাহাড়ে যে সংকট চলছে তা উত্তরণের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই সরকার যদি এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ না নিয়ে ‘রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এই উদ্যোগ নেবে’-- এমন কথা বলে দায় এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে সংকটের সমাধান হবে না। কারণ এ যাবত দেশে যেসব রাজনৈতিক-সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা দমন-পীড়ন ছাড়া পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে যৌক্তিক কোন সমাধানের চেষ্টা করেনি। এমনকি পার্বত্য চু্ক্তি নামে একটি চুক্তি করলেও তা ঝুলিয়ে রেখে দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়েছে পাহাড়ি ধ্বংসের নীলনক্সা বাস্তাবযন করেছে। কাজেই, যা করতে হবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই মূলত উদ্যোগ নিতে হবে এবং পরিস্থিতি উত্তরণমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

একই সাথে সরকারকে পাহাড়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োজিত ও সুবিধাপ্রাপ্ত সকল সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারপূর্বক অন্যায়-অবিচারে নিয়োজিতদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

০৬.১০.২০২৪

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন