মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি

আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ৩০টি ধারা সম্বলিত এই ঘোষণাপত্রের ৫ নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা অবমাননাকর আচরণ করা কিম্বা কাউকে নির্যাতন করা বা শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করা চলবে না’;  ৯নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘কাউকে খেয়াল খুশীমত গ্রেফতার বা আটক করা অথবা নির্বাসন দেয়া যাবে না;  ১৫ নং ধারায় বলা হয়, ‘প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে। কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না’; ২০ নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হবার অধিকার রয়েছে’।
 
৬৫ বছর আগে এই মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এর কোন বালাই নেই। যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চালানো হচ্ছে নিপীড়ন-নির্যাতনের স্টিম রোলার। চালানো হয়েছে ডজনের অধিক গণহত্যা ও সাম্প্রতিক তাইন্দং হামলা সহ অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা। যত্রতত্র ধর-পাকড়, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাতো বলেই শেষ করা যাবে না। আজও এসব নির্যাতন, হামলা-মামলা, ধরপাকড়ের কোন শেষ নেই। মানবাধিকার দিবসের একদিন আগে গতকাল ৯ ডিসেম্বর থেকে খাগড়াছড়ি জেলায় শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যেীথ বাহিনীর অপারেশন। গতকাল ৯ ডিসেম্বর সোমবার রাতে দিঘীনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি তল্লাশি ও ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। দিঘীনালা ও মহালছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৮ নেতা-কর্মী এবং মাটিরাঙ্গায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। অপারেশন আরো কয়েকদিন পর্যন্ত চালানো হবে এবং ধরপাকড় চলবে এমন আভাষও পাওয়া যাচ্ছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সংখ্যালঘু পাহাড়ি জাতিগুলোকে নিজস্ব জাতীয়তার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চলছে। ’৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে যেভাবে এসব জাতিগুলোর উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল একইভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমেও বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র চরমভাবে লংঘন করা হয়েছে। 

মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শান্তিপূর্ণভাবে সকলের সম্মিলিত হবার অধিকারের কথা বলা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে মিছিল-মিটিং ও সমাবেশ আয়োজনে প্রায়ই বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির আওতায় এখনো সেনা শাসন ‘অপারেশন’ উত্তরণ জারি রেখে এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী যত্রতত্রভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে। ইচ্ছে হলেই যে কাউকে আটক, নির্যাতন, হয়রানি, খবরদারি-নজরদারি সহ হাতে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণের ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। শান্তির বাণী শুনিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলা, ভূমি বেদখল আগের মতোই রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত অশান্তির বীজই বপন করা হয়েছে।

তাই, বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে সকলের প্রতি আহ্বান- আসুন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনা, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন সহ সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নমুক্ত একটি স্বশাসিত পার্বত্য চট্টগ্রামের দাবি জানাই।

নিরন চাকমা
১০.১২.২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন