শনিবার, ২ আগস্ট, ২০১৪

সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রীর নাকে বারুদ আর রক্তের গন্ধ !

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙামাটিতে ব্যক্তিগত সফরে এসে গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই ২০১৪) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে আলোচনার সময় বলেছেন তিনি নাকি পার্বত্য এলাকায় এসে 'বিপদের গন্ধ, বারুদের গন্ধ, রক্তের গন্ধ এবং ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন।' 

আসলে যারা এসব নিয়ে খেলে তারা প্রতিনিয়তই এসবের গন্ধ পান। কারণ তাদের নাকগুলো সবসময় এসব গন্ধে ঠাসা থাকে। ওবায়দুল কাদের সাহেব যেহেতু এসবের গন্ধ পেয়েছেন সেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে নিশ্চয় আরো বেশি সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ সহজ-সরল জীবন-যাপনে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু বার বার নিপীড়ন-নির্যাতন ও আগ্রাসনের শিকার হতে হতে তাঁরা এখন আর সহজ সরল জীবন-যাপন ভুলে গেছে। এখন তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, অনেক সময় প্রতিরোধও গড়ে তোলে। আর জুম্ম জনগণ যখনই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখনই সরকারের এসব মন্ত্রী-আমলা ও চক্রান্তবাজরা পাহাড়ে বারুদের গন্ধ পায়, রক্তের গন্ধ পায়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। এটাই হচ্ছে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠির সবচেয়ে বড় চক্রান্ত।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর কারা ডজনের অধিক গণহত্যা চালিয়েছে, কারা কয়েক ডজন সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করেছে, কারা লাখ লাখ একর জায়গা-জমি বেদখল করে জুম্মদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করেছে এবং উচ্ছেদ প্রক্রিয়া জারি রেখেছে-- এটা কি সরকারের এইসব মন্ত্রী মহোদয়গণ একবারও ভেবে দেখেছেন?

সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও সেটলার পুনর্বাসনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জুম্মদের উচ্ছেদ করা হবে, জুম্মরা ধর্মকর্ম পালনের জন্য নিজ নিজ এলাকায় বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করতে পারবে না, বাধা দেয়া হবে, জুম্মরা নিজ জায়গা-জমির মালিকানা দাবি করতে পারবে না, সেটলার লেলিয়ে দিয়ে জায়গা-জমি কেড়ে নেয়া হবে--এসব অন্যায়-অবিচার জুম্ম জনগণ মাথা পেতে নিলেই বোধহয় সরকার ও সরকারের এইসব মন্ত্রী-আমলারা বেজায় খুশী হয়! কিন্তু জুম্ম জনগণতো আর লক্ষীছেলের মতো এসব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তাইতো তাদের এত গা জ্বালা।

সরকারের এটাই মনে রাখা দরকার যে, উন্নয়নের ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে আর ঘুমিয়ে রাখা যাবে না। জুম্ম জনগণ এখন সর্বদা জাগ্রত রয়েছে। সরকার যদি জোরজবরদস্তি করে জুম্ম জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়, জনগণের ন্যায় সঙ্গত প্রতিবাদ-আন্দোলন দমনের মাধ্যমে জুম্ম জনগণকে পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ রাখতে চায় তাহলে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

আর পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের এটাই মনে রাখা দরকার যে, মন্ত্রী সাহেব যেসব গন্ধ পেয়েছেন সেসব গন্ধের একমাত্র বাহক তিনি এবং তার সরকার ও এদেশের শাসকগোষ্ঠি। নানা উন্নয়নের বুলি ও চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসবাণী শুনিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জুম্ম জনগণকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই সরকারের সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধই পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের টিকে থাকার একমাত্র হাতিয়ার।#

নিরন চাকমা
২.০৮.২০১৪

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন