রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

১৩তম মৃত্যুদিবসে শহীদ রূপক চাকমা'র স্মরণে..

আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ শহীদ রূপক চাকমার ১৩তম মৃত্যু দিবস। ২০০১ সালের এই দিনে ইউপিডিএফ’র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পানছড়ির মধুমঙ্গল পাড়ায় সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের উদীয়মান জুম্ম নেতৃত্বের মধ্যে রূপক চাকমা ছিলেন একজন। তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি কোন লোভ-লালসার কাছে বশীভূত না হয়ে সাহসিকতার সহিত জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। কিন্তু ঘাতকরা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। সেদিন নিরস্ত্র এই জুম্ম তরুণ নেতাকে খুন করতে ঘাতকদের হাত একটুও কাঁপেনি। বরং তাঁকে খুন করে তারা খুশীতে আত্মহারা হয়েছিলো।

নতুন কোন লেখার অবতারণা না করে আমার পুরোনো নোট থেকে রূপক দা'কে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক নীচের লেখাটি এখানে সংযুক্ত করছি:
"আমার অনুসরণীয় ব্যক্তিদের মধ্যে রূপক চাকমা ছিলেন একজন। তার সাথে কাজ করার তেমন বেশি সুযোগ না হলেও যে ক’বার তার সাথে সফরসঙ্গী হয়েছি তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

মনে পড়ছে ১৯৯৯ সালের কথা। রূপক দা সহ পিসিপি’র কেন্দ্রীয় একটি সফর দল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সফর করে। এ সফর দলে আমিও যোগ দিই। সফর দলে আরো অনেকে ছিলেন, যারা আর এখন পার্টি বা সংগঠনের সাথে যুক্ত নেই। খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের পর সফর দলটি রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে চৈ ছড়ি নামক একটি গ্রামে আমরা রূপক দা সহ একটি বাড়িতে রাতযাপন করি। যতদূর মনে পড়ে ২১ জানুয়ারি ঘিলাছড়ি ইউপি কমিটি গঠনের পর বিকেলে আমরা রওনা দিই লক্ষীছড়ির উদ্দেশ্যে। ঘিলাছড়ি মৌন পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে আমরা লক্ষীছড়ির পেক্কো আদামে গিয়ে পৌঁছি। সেখানে রাতযাপন করা হয়। পরদিন আমরা রওনা দিই লক্ষীছড়ি উপজেলা সদরের উদ্দেশ্যে। বিকেলের দিকে আমরা মরাচেঙের বাদী পাড়া নামক এলাকায় গিয়ে পৌঁছি।
২৪ জানুয়ারি লক্ষীছড়ি থানা শাখার সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এ সম্মেলন বানচাল করার জন্য প্রশাসন চক্রান্ত করে ১৪৪ ধারা জারি করে। এদিন রূপক দা সহ অন্যান্য নেতারা ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সহিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হন। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেদিন আমাদের সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

মৃত্যুর কিছুদিন আগেও রূপক দা লক্ষীছড়ি সফর করেন। সে সময়ও তার সাথে থাকা-খাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। সেখানে অবস্থানকালে তিনি প্রচণ্ড ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন। ঔষধ সেবনের পর কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও তখন পর্যন্ত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ অবস্থায় পানছড়ি এলাকায় ইউপিডিফ’র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য তার উপর দায়িত্ব পড়ে। তিনি কোন কার্পণ্য না করে লক্ষীছড়ি থেকে খাগড়াছড়িতে যান নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে। কিছুদিন পরই তার মৃত্যুর খবর শুনতে পাই।"

রূপক দা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার যে চেতনা, তার যে আদর্শ সেটা কোনদিন মুছে যাবে না। জুম্ম জাতির আদর্শের প্রতীক হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন।

১৩তম মৃত্যু দিবসে রূপক দা তোমায় রেড স্যালুট!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন