শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

খাগড়াছড়িতে হানিফ সংকেতের ইত্যাদি, আশঙ্কিত পাহাড়িরা

বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র জন্য হানিফ সংকেত সবার কাছে অতি পরিচিত একজন ব্যক্তি। এই ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দেশের নানা অসংগতি তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকেন। হানিফ সংকেত এবার ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি ধারণ করেছেন পার্বত্য খাগড়াছড়িতে। খাগড়াছড়ি সেনানিবাস এলাকায় ধারণকৃত উক্ত অনুষ্ঠানটি গত ৩০ জানুয়ারি বিটিভি ও বিটিভি ওয়াল্ডে প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের উপকারের বদলে অপকার বয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

মূলত হানিফ সংকেতকে ব্যবহার করে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ভুলিয়ে রাখার কৌশল হিসেবেই ইত্যাদি ধারণ অনুষ্ঠানটি খাগড়াছড়িতে আয়োজন করেছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।  

হানিফ সংকেত অনুষ্ঠানের শুরুতে খাগড়াছড়িকে শান্তি সম্প্রীতির শহর বলে উল্লেখ করেছেন, যে শব্দগুলো সেনাবাহিনীই বেশি ব্যবহার করে থাকে। অথচ এই খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের উপর সংঘটিত হামলার ঘটনাবলী দেখলে, প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের চিত্র দেখলে আমরা কোন শান্তি-সম্প্রীতি খুঁজে পাই না। যেমন- ২০১০ সালে খাগড়াছড়ি শহরেই পাহাড়িদের ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ২০১১ সালে রামগড়ের শনখোলা পাড়া ও ২০১৩ সালে মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং ২০১৪ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রয়ারী খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ও বেতছড়িতে পাহাড়িদের উপর হামলা-এসব ঘটনাগুলো দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

ইত্যাদি অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগজনক প্রতিবেদন হচ্ছে সাজেককে নিয়ে যা দেখানো হয়েছে সেটা। যে সাজেক থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে দুইবার (২০০৮ ও ২০১০ সালে) হামলা চালিয়ে পুড়ে ছাড়খার করে দেওয়া হয়েছিল পাহাড়িদের গ্রাম, ঘরবাড়ি, সে সাজেককে দেশের সম্ভাবনাময়ী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তিনি উপস্থাপন করেছেন। ভিডিও চিত্র ধারণ করে তিনি দেখিয়েছেন সেনাবাহিনীর গড়ে তোলা হোটেল এবং তাদের রং করে দেওয়া ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কিছু ঘরবাড়ি। কিন্তু তিনি কি একবারও খোঁজ নিয়ে দেখেছেন সাজেকে বসবাসরত পাহাড়িরা কোন পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেখানে বসতি গড়তে বাধ্য হয়েছেন? তিনি কি ভেবে দেখেছেন পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সাজেকের সহজ-সরল নিরীহ পাহাড়িদের কি পরিণতি হবে? তার রিপোর্ট উপস্থাপনের ধরণ দেখে তো তা মনে হয়নি। বরং তিনি সেনাবাহিনীর প্রশংসার গানই গেয়েছেন। এতেই স্পষ্ট যে, সাজেকের প্রকৃতি, সাজেকের বন দখল করে সেখান থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে সহায়ক কর্মসূচি হিসেবেই হানিফ সংকেতকে ব্যবহার করা হয়েছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের জন্য মঙ্গলের জন্য তো নয়-ই, ভবিষ্যতে সাজেকবাসীকে নিজেদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনাই পাকাপোক্ত করা হলো।

কাজেই, ইত্যাদি অনুষ্ঠানের নামে খাগড়াছড়িতে যা হয়ে গেলো তা নিয়ে পাহাড়িরা ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কিত না হয়ে পারছে না।

নিরন চাকমা
০৫.০২ ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন