- নিরন চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বরাবরই অশান্ত করে রেখেছে শাসকগোষ্ঠি। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার-বিবেচনা করে থাকে। ফলে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে কখনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী, কখনো সেটলার লেলিয়ে দিয়ে, কখনো ভাগ করে শাসন করার নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। কেড়ে নেয়া হচ্ছে পাহাড়িদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ভুমি। যতই দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। পাহাড়িরা সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ট হচ্ছে সেটলার বাঙালিরা। বদলে দেয়া হচ্ছে জনমিতি।
একাত্তর সালে পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এদেশের শাসকগোষ্ঠির মধ্যে পাকিস্তানের ভুত চেপেছিল। ফলে তারা স্বাধীন হতে না হতেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন করে পাহাড়িদের ওপর নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাতে শুরু করে, যা দীর্ঘ ৫৪ বছরে এসেও একই অবস্থায় রয়েছে। শাসকগোষ্ঠির নিপীড়নে পিষ্ট হতে হতে মৃতপ্রায় পাহাড়িদের ধ্বংস করে দিতে শাসকগোষ্ঠি নানা ষড়যন্ত্র করছে। এতে পাহাড়িরা এখন চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে।
সম্প্রতি দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটি শহরে সংঘটিত সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনা পাহাড়িদেরকে আরো বেশি উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। এমন এক সময়ে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে, যখন দেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে এবং দেশের ছাত্র সমাজ ও জনগণ বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশের গড়ে তোলার কথা বলছেন।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পাহাড়িরা ভরসা করার মতো আর কাউকেও পাচ্ছে না। এতদিন ফ্যাসিবাদী শাসকরা যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সেভাবে দেখছে বলেই মনে হচ্ছে। না হলে সম্প্রতি রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যাওয়া সরকারের উপদেষ্টারা সেনা ব্রিগেডে মিটিং করতেন না।
অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে দেশের শাসক, আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের (অবসরপ্রাপ্তদেরসহ) মনোভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি। এমনকি মুষ্টিমেয় বাদে বেশিরভাগ বাঙালি জনগণের মানসিকতারও কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িদের বিতাড়িত করতে পারলেই যেন তারা বড়ই সুখী হয়।
বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলের মানুষদের ও শাসক-আমলা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া দরকার। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে তথা পাাহড়িদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হতে পারবে না।
২৭.০৯.২০২৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন