আজ ১৩ই
অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদাস মুনি চাকমার
২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের এই দিনে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার থানা বাজার
এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে এসে সেনাবাহিনী
ও সেটলার বাঙালিদের যৌথ হামলায় তিনি শহীদ হন।
সেদিন যা
ঘটেছিল (একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে সংক্ষেপিত):
“
সমাবেশের দিন (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে স্থানীয় কিছু বাঙালি বেতনভুক নেতা থানা
বাজারে দোকানপাট বন্ধ করার চেষ্টা করে। তারা ক্ষেত খামারে যে বাঙালিরা কাজে
নেমেছিল তাদেরও কাজ বন্ধ করে লাঠিসোটা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যেতে বাধ্য করে। থানা
বাজার সেদিন হাটের দিন। স্বাভাবিকভাবে যেসব লোকজন বাজার অভিমুখে আসছিল তারা যাতে
আসতে না পারে তার জন্য ফেরীঘাট বন্ধ সহ রাস্তার মোড়ে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পথ
রোধ করে রেখেছিল বাঙালিরা।
ইতিমধ্যে
হাজার হাজার বাঙালি দা, খন্তা, বল্লম, লাঠি, সাইকেলের চেইনসহ আরো বিভিন্ন ধারালো
অস্ত্র নিয়ে ভাঙা বিল্ডিং নামক আর্মি চেকপোষ্ট কাছে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে অবস্থান
নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাঙালিরা আরো বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং উস্কানিমুলক
শ্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় সমাবেশে যোগ দিতে আসা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একটি মিছিল
মাইনী ব্রিজ অতিক্রম করলে সাথে সাথে আর্মি চেক পোষ্ট থেকে রাস্তা ব্লক করা হয়। এ
সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা মাসুদ রানা, ইলিয়াস, তরুণ বিশ্বাস সহ আরো কিছু বাঙালি
পাহাড়িদের দিকে এগুতে থাকলে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। এ সময় দাঁড়িয়ে তামাশা
দেখছিলো লে: ফরিদ।
বাঙালিরা
যখন পাহাড়িদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়া শুরু করলো ঠিক তখনই আর্মি চেকপোষ্ট থেকে
একটি হুইসেল বেজে উঠে।
সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার বাঙালি পাহাড়িদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথম দিকে পাহাড়িরা
আক্রমণ প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। অবস্থা নাজুক আকার নিলে টিএনও পুলিশকে ফাঁকা গুলি
করার নির্দেশ দেন। গুলির শব্দ হওয়ায় সাথে সাথে পাহাড়িরা দৌঁড়ে পালাতে থাকে। এ
সুযোগে বাঙালিরা আরো বেশি পাহাড়িদের উপর আক্রমণ চালায়। এতে ভরদাস মুনি মারা যায়
এবং আরো অনেকে আহত হয়।”(চোখে দেখা ও কানে শোনা, রক্তাক্ত দিঘীনালা- সুপ্রিয়,
জুম্মকণ্ঠ, ২০ নভেম্বর ১৯৯২)
সেদিন
অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষের তেজোদীপ্ত মিছিলে সামিল হয়েছিলেন বানছড়া গ্রামের ৭০
বছরের বৃদ্ধ ভরদাস মুনি। প্রৌঢ়ত্ব তাকে অন্ধকার ঘরের কোণে আটকিয়ে রাখতে পারেনি।
দাসত্ব ও নিপীড়ন নির্যাতনের শৃংখল থেকে মুক্তির জন্য তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে বেরিয়ে
এসেছেন এবং অধিকারহারা মানুষের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ
করেছেন। তাঁর এই আত্মবলিদান কিছুতেই বৃথা যাবে না।
শহীদ
ভরদাস মুনি তোমায় লাল সালাম।!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন