বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১১

ফেসবুকে আলোচনা-৩

অডঙ চাকমার ২য় পর্ব জবাবের প্রেক্ষিতে

প্রিয় অডং,
 আপনার 'নিরন চাকমার জবাবে(২য় পর্ব)' পড়লাম। আপনি লিখেছেন:

'দেশের সকল আইন, সকল নীতি, সকল রাষ্ট্রীয় র্কমকান্ড যদি দেশের সংবিধানের সাথে সংগতি রেখে করতে হয়, তাহলে একটি পার্টির সকল নীতি, র্কমসূচী বা র্কাযক্রম কনে গঠনতন্ত্র অনুসারে হবে না? সংবিধানের আলোকে যদি ডিফেন্স পলিসি করতে হয়, একটি দেশের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করতে সংসদের অনুমোদন লাগে সেখানে কেন একটি রাজনতৈকি দলের সেলফডিফেন্স-এর জন্যে গঠনতন্ত্রের নীতি-আর্দশ অনুসরণ করতে হবে না? পার্টির সবাই সাধু সজ্জন নয়। সেলফডিফেন্স-এর নামে যদি অরাজকতা সৃষ্টি হয়, খুন খারারি মারামারি হয়, সেগুলোর দায়দায়িত্ব কে নেবে? সেসব অন্যায় বা অপরাধরে জন্যে কী বিচার হবে? র্পাটি কীভাবে ভুক্তভোগীদের জন্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব?'

বলবো অন্যকে জব্দ করতে আপনি চমকার কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। আপনার এ বিরল গুণের তারিফ করতে হয়। এ প্রসঙ্গে একটি বুদ্ধ জাতকের কথা মনে পড়ছে। একদিন ধর্ম সেনাপতি সারিপুত্র ধর্মসভায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক বৃদ্ধ ভিক্ষু তাকে জব্দ করার জন্য একটি অন্তঃসারশুন্য, অর্থহীন প্রশ্ন করে(অর্থা সেই প্রশ্নটার কোন উত্তর হয় না)। সারিপুত্র সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ধর্মসভা থেকে উঠে নিজ শয়ন কক্ষে চলে যান। এতে ধর্ম কথা শ্রবণে ব্যাঘাত ঘটার জন্য উপস্থিত শ্রোতারা ক্ষুদ্ধ হয় এবং ওই বৃদ্ধ ভিক্ষুকে ধর ধর বলে ধাওয়া করে। বৃদ্ধটি পালানোর সময় ভিক্ষুদের ব্যবহৃত পায়খানায় পড়ে যান। এভাবে তার আত্মরক্ষা হয়। পরদিন এ বিষয়টি বুদ্ধকে জানানো হলো বুদ্ধ এ জাতকটি বলেছিলেন। এটি ঈশান চন্দ্র ঘোষ অনূদিত ছয় খণ্ডের জাতকের ২ নং খন্ডে সংকলিত হয়েছে(১৫৩ নং জাতক)। এই জাতকটিই আমার উত্তর মনে করতে পারেন।

তবে জাতকটি পড়ে যাতে আমাকে ভুল না বুঝেন তার জন্য আগে ভাগে এখানে বলতে চাই, আমি মোটেই নিজেকে সিংহতুল্য মনে করছি না। মহান সারিপুত্রের সাথেও নিজেকে তুলনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই। 'কুদু আগাজর চান তারা, কুদু পুনর কেজ ফরা।' সারিপুত্র হলেন আকাশের গ্রহ নত্র -- মহাপুরুষ। আর আমি হলাম একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী। তার সাথে নিজেকে তুলনা করে পাপের ভাগীদার হতে চাই না।

আপনার প্রশ্নগুলোও আমি একেবারে অন্তঃসার শূন্য বলছি না। আপনি একজন অভিজ্ঞ মানুষ, আপনি নিশ্চয়ই সে রকম প্রশ্ন করবেন না। তবে আপনি যে প্রশ্নগুলো করেছেন তার জবাব জানা থাকলেও এখানে এ সময়ে উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আপনি জানেন আমরা কোন পরিস্থিতিতে কাজ করি। আর এটা জেনেই আপনি ওই প্রশ্নগুলো করেছেন। সুতরাং এ অবস্থায় শ্রদ্ধেয় সারিপুত্রের কৌশল অবলম্বন করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।

মিটিং মিছিল মানববন্ধন প্রসঙ্গ:
এগুলো করতে রাজনৈতিক দলের লোক হতে হয় না। কেবল রাজনৈতিক দলগুলো মিটিঙ মিছিল সমাবেশ মানববন্ধন করে না। এনজিওগুলোও দেদার করছে। বরং বলা যায় বাংলাদেশে অন্যান্য সেকটরের মতো রাজনীতিটাও এনজিওকরণ হয়ে যাচ্ছে।

যাই হোক, যে বিতর্ক হলো তার থেকে আমরা কী সিদ্ধান্ত টানতে পারি? আমার মতে, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য যে যেভাবে পারে কাজ করতে হবে। গণবিক্ষোভ গণপ্রার্থনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আন্দোলনকে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত করতে হবে। যারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে তাদের সবাইকে একই প্লাটফরমে আসতে হবে শত মত পার্থক্য বিতর্ক সত্বেও। এভাবে যদি ব্যাপক ঐক্য গড়ে ওঠে তাহলে সেটা ঐক্য-সমঝোতা বিরোধীদের ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে এবং শেষে এক পর্যায়ে তারা সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

যখন এই উত্তরটা লিখতে শুরু করি তখন জানতে পারি বাঘাইছড়ি ও দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর হামলা হয়েছে। একজন মারা গেছে, অনেকে আহত হয়েছে। আর কতকাল আমাদের এভাবে মার খেয়ে থাকতে হবে? নিজ জন্মভূমিতে আমরা আজ পরবাসী শুকর কুকুরের মতো ধরে ধরে মারছে। যখন ইচ্ছে হয় তখন হামলা চালাচ্ছে। মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করছে। এর পরও সন্তু বাবুরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ইউপিডিএফের সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেতে চান না। সন্তু বাবু ছাড়া জেএসএসে বুঝার মতো নেতা কি আর নেই? নিজেরা নিজেরা মারামারি করলে আমাদেরই ক্ষতি সেটা বুঝার মানুষ কি জেএসএস(সন্তু গ্রুপ)-এর মধ্যে নেই? চুপ করে বসে থাকার আর সময় নেই। যারা এতদিন চুপ করে আছেন তারা জেগে উঠুন। ঐক্য ছাড়া কোন বিকল্প নেই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন