আজ ১২ মার্চ ২০১৪ সাল।
গতবছর (২০১৩) এইদিনে জনসংহতি সমিতি(এমএন লারমা)-এর অন্যতম সংগঠক সুদীর্ঘ চাকমা লংগদু
এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের
(এক সময়ের আন্দোলনের সহযাত্রী!) ব্রাশ ফায়ারে
৩জন সহযোদ্ধাসহ নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। আজ তাঁর এবং তাঁর সাথে নিহত সহযোদ্ধাদের
মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হল।
সুদীর্ঘ চাকমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে
আমার তেমন পরিচয় ছিল না। তাঁর সম্পর্কে তেমন বেশি কিছুও জানার সুযোগ হয়নি। তবে এটা জানি,
জেএসএস’র নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি সকলের সাথে মিশতে পারতেন।
পার্বত্য চট্টগামের তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত
বন্ধে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সোচ্চার।
পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান
ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সম্পর্কে “মনুষ্যত্বের মৃত্যু ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত”(পার্বত্য চট্টগ্রাম
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রকাশনা ‘উন্মেষ’, পৃষ্ঠা-২২) শিরোনামে লেখা থেকেই বুঝা যায়
তিনি এ বিষয়ে কেমন উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। লেখাটির শূরুতে তিনি বলেন, ‘ আমরা আমাদের
যুবকদের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে মারা যেতে দেখে বিচলিত হই। হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করি।’...
এ লেখায় তিনি আরো বলেন
‘... ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে গোটা জুম্ম জাতি যেখানে ঐক্যমত সেখানে জনমতের বিপক্ষে
গিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্মুলিকরণের নীতি শাসকগোষ্ঠীর হাতকে শক্তিশালী করছে। ফলে
অনেক সংগ্রামী সোনালী অতীত থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার মোহে বর্তমানে অনেক নেতা জুম্ম জাতির
ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তাই সময় এসেছে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোন স্বার্থের
পেছনে না ছুটে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা সহ জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে
কাজ করে যাওয়া...।’
তিনি তার উপলব্ধিবোধ থেকে
লেখার এক জায়গায় বলেছেন ‘... একদিকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে মৃত্যু, অন্যদিকে মনুষ্যত্বের
মৃত্যু এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে দরকার প্রগতিশীল আদর্শের রাজনীতির...।’
তাঁর এসব কথাবার্তা মাধ্যমে
বুঝায় যায় যে, তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে কতটা সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু বিধির
লিখন না যায় খন্ডন। যে সংঘাত বন্ধের জন্য তিনি মনেপ্রাণে কাজ করেছেন সে সংঘাতেই তাকে
জীবন দিতে হলো। এর চেয়ে নির্মম, নিষ্ঠুর আর কি হতে পারে?
সুদীর্ঘ চাকমা আজ হয়তো
আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের যে উপলব্ধি অনুভব করেছিলেন,
সেই উপলব্ধিবোধ আমাদের সকলের মধ্যে জাগ্রত করতে পারলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান
সংঘাত নিশ্চয়ই বন্ধ করা সম্ভব হবে। আর এই সংঘাত বন্ধ করতে পারলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের
ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পরিপূর্ণতা লাভ করবে। সকলের মনে এই বোধ জাগরিত হোক
এই প্রত্যাশায়।
নিরন চাকমা
১২.০৩.২০১৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন