আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা
দিবস পালিত হলো। গাওয়া হলো লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত। খরচ করা হলো কোটি কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে
যাবার সুযোগ না হলেও ঘরে বসে টিভির পর্দায় লাইভ অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ হয়েছে। অনুষ্ঠান
দেখে মনে হলো গিনেস বুকে বিশ্ব রেকর্ড করার জন্য এই আয়োজন ছিল শুধুমাত্র বাঙালি জাতির
জন্যই। দেশের অন্যান্য জাতির জনগণ অনুষ্ঠানে বিভিন্নভাবে অংশ নিলেও তাদেরকে আজ আবারো
বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত করা হলো। যেমনটি করা হয়েছিল শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং মঞ্চ থেকে দেয়া ঘোষণার মধ্যে শুধুমাত্র বাঙালি জাতি গৌরব,
বাঙালি জাতির স্বাধীনতা... এসব শব্দগুলোই উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এদেশে বাঙালি ছাড়াও
যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সান্তাল, গারো, মুনিপুরী সহ ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতির
বসবাস তাদের অবদানের কথা একবারও উচ্চারিত হলো না। তাহলে এই দেশ, এই স্বাধীনতা কি শুধু
বাঙালিদের জন্য?
সত্যিই তাই, এই দেশের স্বাধীনতা
আসলে শুধু বাঙালিদের জন্যই। বৃহৎ এই বাঙালি জাত্যাভিমানের কারণেতো সংবিধানে 'এদেশের
জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি...' শব্দটি বসিয়ে দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর অস্তিত্বকে অস্বীকার
করা হয়েছে। আজকের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গিনেস বুকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার অনুষ্ঠানেও
তার প্রতিফলন ঘটেছে।
আসলে এদেশ স্বাধীন হলেও
বাঙালি ছাড়া দেশের অপরাপর জাতিসত্তাগুলো স্বাধীনতার স্বাদ এখনো উপভোগ করতে পারেনি।
শুধু তাই নয়, এদেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষও বলতে গেলে স্বাধীন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে
বসবাসরত পাহাড়ি জাতিগুলোর উপর স্বাধীনতার পর হতে আজ পর্যন্ত নিপীড়ন-নির্যাতন অব্যাহত
রাখা হয়েছে। যাকে জাতিগত নিপীড়ন ছাড়া আর অন্য কিছু বলার কোন উপায় নেই। একটা স্বাধীন
দেশে বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতির মানুষকে নিপীড়ন-নির্যাতন করে, তাদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন
করে দিয়ে স্বাধীনতার সুখ উপভোগ করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি কি উন্নতি লাভ করতে পারবে?
এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালি ছাড়াও দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোরওতো অনেক অবদান রয়েছে।
কিন্তু সে অবদান কেন বৃহৎ বাঙালি জাত্যাভিমানের খোলসে বন্দী করা হবে?
আমরা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা,
খিয়াং, মুরং, সান্তাল, গারো থেকে শুরু করে দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করা সংখ্যালঘু জাতিগুলো
নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অস্তিত্ব নিয়েই এদেশের বসবাস করতে চাই। কিন্তু দেখা যায়, শুধুমাত্র
সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এসব জাতিসত্তাগুলোকে ব্যবহার করা হয়। যখন অধিকারের প্রশ্ন আসে,
যখন স্বাতন্ত্র্য ইতিহাস-ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব সংরক্ষণের কথা আসে তখন রাষ্ট্র বৃহৎ বাঙালি জাত্যাভিমান প্রয়োগ করে তাদেরকে বিলীন করে
দিতে চায়। রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত এই বৃহৎ জাত্যাভিমান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত
এদেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলো নিজেদেরকে কিছুতেই স্বাধীন জাতি হিসেবে ভাবতে পারবে না।
তাই, দেশের সংখ্যালঘু জাতি ও জনগণকে নিজ নিজ জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম
করে যাওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।
নিরন চাকমা
২৬.০৩.২০১৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন