মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

সরকারকে শুধু প্রশংসা করতে হবে কেন?

কিছুদিন আগে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান সরকারের ব্যর্থতায় সংখ্যালঘু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সমালোচনা করায় সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েছেন। জাতীয় মানববাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কি সরকারের সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই?
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের সমালোচনা করা, দোষত্রুটি তুলে ধরার অধিকার সবারই রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের লেবাসধারী এদেশের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা(প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে) কিছুতেই সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। কেউ সমালোচনা করলে তাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়ে থাকে। এটা কেন?

যদি প্রশ্ন করে বলা হয়, দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হলেও রাষ্ট্র কি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে? উত্তর হবে না, রাষ্ট্র তা পারছে না। কারণ প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় খুন, গুম, ধর্ষণ, গুপ্ত হত্যা, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র দেখলে তার প্রমাণ মেলে। সরকার দলীয় লোকজনই অনেক ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথাও আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র এসব প্রতিকারে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? বরং অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে সরকারের কোন কোন মহলের ইন্ধনেই প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করা যাবে না, বরাবরই সরকারকে প্রশংসা করতে হবে তা কি করে হবে?

দেশের দক্ষিনপূর্ব প্রান্তের পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থাতো আরো ভয়াবহ। এখানে সরকার ও সরকারী নানা সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ, খুন, নিপীড়ন নির্যাতন, ভূমি বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়িদের উচ্ছেদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিকারতো দূরেই থাক, রাষ্ট্রীয় বাহিনীই এর মূল ইন্ধনদাতা। তাহলে প্রতিকার করবে কে? এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেও সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজির লেবাস লাগিয়ে দেয়া হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়, রাতের আঁধারে ঘরবাড়িতে চালানো হয় তল্লাশি। এই হচ্ছে অবস্থা!

সরকার বা রাষ্ট্র যেখানে নির্বিকার, যেখানে সরকার নিজেই এসবের ইন্ধন যোগায় সেখানে সচেতন নাগরিকরা নিশ্চয় এর সমালোচনা করবে, প্রতিবাদ করবে। কিন্তু নাগরিকদের সমালোচনা করার অধিকারও কেড়ে নিতে চাওয়া মানে কি? এটা স্বৈরতন্ত্রের চাইতে কম কিসে?

দেশের অন্যায়-অবিচার ও নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে(নাগরিকদেরকে)অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে, সমালোচনা করতে হবে। রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা যতই বেজার হোক না কেন আমাদেরকে এটা করে যেতেই হবে। কারণ এটা আমাদের মৌলিক অধিকারই বটে। কাজেই, সোচ্চার হওয়া ছাড়া এসব অন্যায়-অবিচার মুখ বুঝে সহ্য করার মতো কোন অবস্থা আর এদেশে নেই।

নিরন চাকমা

২৫.০৩.২০১৪ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন