রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

কুদৃষ্টির হাতে আর কত সুদৃষ্টির প্রাণ বলি হবে?

সুদৃষ্টি চাকমা(৩৫), পিতা-মৃত নিতাই চাকমা। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম একি চাকমা। ছেলেটি বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে। নাম সুপার চাকমা(১৫)। আর মেয়েটি পড়ে বাবুছড়া আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণীতে। তার নাম ওহেলী চাকমা(৭)। দিঘীনালার বাবুছড়া ইউনিয়নের মঘ্যা কার্বারী পাড়ায় তার বাসা।

হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে কোন সেই সুদৃষ্টি চাকমা। বলছিলাম সেই সুদৃষ্টির কথা, যে সুদৃষ্টি চাকমা আজ (৯ মার্চ) রবিবার সকালে দিঘীনালার বাবুছড়া রাস্তামাথায় সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছিলো।

সুদৃষ্টি হয়তো জানতোই না ঘাতকদের কুদৃষ্টি আজ তার প্রাণ কেড়ে নেবে। তাই প্রতিদিনের মতো সে তার দৈনন্দিন করণীয় কাজগুলো(সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত) সেরে ফেলার জন্য আজ সকালে বাসা থেকে পাশ্ববর্তী বাবুছড়া রাস্তামাথায় বের হয়েছিলো। বসেছিল একটি চায়ের দোকানে। তার সাথে ছিল তারই আরেক সহকর্মী ঋদ্ধি চাকমা। কিন্তু বিধিবাম কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুর্তের মধ্যে ঘাতকরা এসে বুলেট বিদ্ধ করলো তাঁর বুকে। নিথর দেহ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। প্রকাশ্যে দিবালোকে জনসম্মুখে তাকে বুলেট নিক্ষেপ করতে ঘাতকদের হাত একটুও কাপলো না! তারা দিব্যি উল্লাস করতে করতে চলে গেলো। চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলো এলাকাবাসী। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা হয়েই গেছে। ঘাতকদের বুলেট বিদ্ধ করেছে সুদৃষ্টির সহকর্মী ঋদ্ধি চাকমাকেও। তবে ভাগ্যক্রমে প্রাণে সে বেঁচে গেছে। দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে এখন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিসাধীন।

সৃদৃষ্টি চাকমা সাংগঠনিকভাবে তেমন কোন বড় নেতা ছিল না। কিন্তু ঘাতকদের কাছে সে ছিল বড় আতঙ্কের। কারণ সে এলাকায় সব সময় সুদৃষ্টি রেখেছিলো। তার কারণে ঘাতকরা সমাজে কুপ্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তাই হয়তো ঘাতকদের কুদৃষ্টি পড়েছিলো তার উপর।  যার করণে তাকে হত্যার পর ঘাতকরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলো। স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো ফেসবুকে। কিন্তু কাকে হত্যা করেছে তারা কি সেটা জানে? তারা কেড়ে নিয়েছে একজন প্রতিশ্রুতিশীল যুবকের প্রাণ। একজন তরতাজা মানুষকে তারা হত্যা করেছে। সুদৃষ্টিকে বুলেট বিদ্ধ করার আগে ঘাতকরা একবারও কি তা ভেবে দেখেছে? এই ঘাতকদের কুদৃষ্টির হাতে আর কত সুদৃষ্টির প্রাণ বলি হবে?

কিন্তু ঘাতকদের এটা মনে রাখা দরকার যে, সুদৃষ্টিকে হত্যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা গেলেও তার চিন্তা-চেতনাকে কিছুতেই ধ্বংস করা যায়নি। যে চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে সে সমাজ-জাতির মঙ্গলের জন্য কাজ করেছিলো তা চলমান থাকবে। একদিন কুদৃষ্টি পোষণকারী ঘাতকদেরও এই সুদৃষ্টির কাছে ফিরে আসতেই হবে।

নিরন চাকমা
৯.০৩.১৪


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন