শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের দেশে দেশে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।

প্রত্যেক দেশের মতো আমাদের বাংলাদেশেও প্রতি বছর এদিনটি পালিত হয়ে আসছে। এদিনটিতে নারী সংগঠনগুলো তপর হয়ে ওঠে। সমাবেশ-মিছিল শোভাযাত্রা হয়। সরকারীভাবেও দিবসটি পালিত হয়। রাষ্ট্রের হোমরা চোমরারা নারী অধিকার নিয়ে অনেক গালভরা বাক্য বিস্তার করেন। অনেক প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। নারী অধিকার বিষয়ক সনদ, সিদ্ধান্ত, প্রস্তাব ও খসড়া আইন লিখতে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের নারী সমাজের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয় না। নারী নির্যাতন, নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ, নারীর অবমূল্যায়ন কমে না।

বর্তমান সভ্য সমাজে রাষ্ট্রযন্ত্রের অসভ্য রক্ষক ও তাদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডাদের হাতে দিনাজপুরের ইয়াসমিন, বাঘাইছড়ির কল্পনা চাকমা ও চট্টগ্রামের সীমারা এখনো বলি হয়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের গার্মেন্টস শিল্পে হাজার হাজার নারী শ্রমিক মানবেতর পরিবেশে অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। মজুরী দাসত্বে তারা বন্দী। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটে নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো বর্বর ঘটনা। বছর শেষে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থা, সংগঠনগুলো নির্যাতনের হিসাব মেলায়। ছাড়িয়ে যায় হাজার হাজার নারী নির্যাতনের ঘটনা। এক কথায় দেশে নারী সমাজের অবস্থা খুবই ভয়াবহ।

দেশের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের অবস্থার চিত্র আরো বেশী ভয়াবহ ও করুণ। জাতিগত নিপীড়ন ও বিশাল সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে ব্যাপক মাত্রায় নারী নির্যাতন। প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে সেনা সদস্য অথবা সেটলার বাঙালিদের দ্বারা লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। সেনা কমান্ডার কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণ পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনার একটি নমুনা মাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক জুম্ম নারী ধর্ষণ, অপহরণ বা জোরপূর্বক বিবাহ বন্ধন কোন অপরাধ বলে গণ্য হয় না। বরং এসব ঘটনা সংঘটনকারীকে পুরষ্কারই প্রদান করা হয়ে থাকে। কারণ এইসব কাজকে তথাকথিত Counter-insurgency -এর কৌশল হিসাবে মনে করা হয়। সেজন্য আজ পর্যন্ত কোন সেনা সদস্যকে নারী নির্যাতনের কারণে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। সর্বদা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে জুম্ম নারীদের। নারী দিবসের একদিন আগে গতকাল শুক্রবার গাড়িযোগে বাসায় ফেরার পথে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে এক জুম্ম নারী তিন বাঙালি যুবক কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী এই দুই মাসে কমলছড়িতে সবিতা চাকমাকে ধর্ষণের পর হত্যা, মাটিরাংগায় নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ, রাঙামাটির সাজেকে সেনা ওয়ারেন্ট অফিসার কর্তৃক এক জুম্ম নারীকে বলাকারের চেষ্টা, মানিকছড়িতে এক মেয়ে শিশুকে ধর্ষণ ও বান্দরবানে এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া ২০১২ সালে ১৯ জন ও ২০১৩ সালে ১৭ জন জুম্ম নারী ও শিশু ধর্ষণ, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে এক তথ্যে জানা গেছে।

আসলে জুম্মোদের নিশ্চিহ্ন করার যে Over all policy, তার থেকেই জন্ম লাভ করে কৌশল হিসেবে জুম্ম নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সন্ত্রাসের। যুদ্ধ কবলিত প্রত্যেক দেশেই ধর্ষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামও যে তার ব্যতিক্রম নয় তার প্রমাণ মেলে এই অপরাধের পরিমাণ ও মাত্রা দেখে।

কাজেই, এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের আরো বেশি সজাগ ও সোচ্চার হয়ে সুসংগঠিত হতে হবে। এইসব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে নারী সমাজকে তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প আছে এমনটা মনে হয় না।

নিরন চাকমা
৮.০৩.২০১৪


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন